লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ( Lawachara National Park ) বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে একটি। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল (আংশিক) উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের মধ্যকার ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যান রয়েছে তার মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম। ১২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে এই উদ্যানের অবস্থান। এই উদ্যানটিকে আপনি প্রাকৃতিক জাদুঘর বললেও ভুল হবেনা।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান - Lawachara National Park

মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান এই উদ্যানের বিভিন্ন প্রকার গাছগাছালি ও পশুপাখি যা বনের শোভা আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। জীব বৈচিত্রে ভরপুর নান্দনিক সৌন্দর্যের অন্যতম এই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি দেশের ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে কি দেখতে পাবেন

এ বনের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে জীব বৈচিত্র। জীব বৈচিত্রের ভরপুর এই উদ্যানে খুব সহজেই দেখা মেলে নানা প্রজাতির বিড়ল পশুপাখির আর এখানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে – যা জাতীয় তথ্যকোষের হিসেবে। তারমধ্যে জারুল, চাপালিশ, লোহাকাঠ, সেগুন, আগর, আকাশমনি, আওয়াল সহ ১৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ। ২৪০ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী,৬ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে বনমোরগ, হরিণ, লজ্জাবতী বানর, সজারু, মুখপোড়া হনুমান, হনুমান, বনরুই গন্ধগোকুল, বাগডাশ, অজগর সাপ, গুইসাপ, শেয়াল, মেছোবাঘ, চিতাবিড়াল, বন্যকুকুর, বনবিড়াল, কাঠবিড়ালী উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে সবুজ ঘুঘুসহ, পাহাড়ি ময়না, ধনেশ, মথুরা বিচিত্র নানান ধরনের পাখি। উল্লুকের সবচেয়ে বড় বিচরণ এলাকা বিলুপ্ত প্রায়।

লাউয়াছড়ার বনের মধ্যদিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেললাইন যার দুইপাশে গাছগাছালি হওয়ায় দর্শনার্থীদের কাছে খুব প্রিয় এই জায়গাটি। রেললাইনের পাশ দিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে যাবার পথে চোখে পড়বে চা-বাগান, উচু-নিচু টিলা, লিচু, লেবু ও আনারস বাগান। রাস্তার দুপাশেই সবুজের ছড়াছড়িতে মনে হবে যেন সবুজের একটি স্বর্গরাজ্য।

৩ টি ট্রেইল এর মাধ্যমে বনের সৌন্দর্যকে কাছ থেকে দেখার জন্য সময় লাগবে এক এক ট্রেইলে এক এক রকম। খুব কাছ থেকে এই বনের রূপ উপভোগ করতে আধা ঘন্টা, এক ঘন্টা ও তিন ঘন্টার ভিন্ন এই ট্রেইল গুলোতে ট্রেকিং করতে হবে। ট্রেকিং এর সহায়তার জন্যে চাইলে সাথে করে গাইড নিয়ে নিতে পারবেন। উঁচু নিচু ও আলো আঁধারের চোখ ধাঁধানো খেলা, ঝিঝি পোকার গান ও পাখির কিচিরমিচির সব কিছু মিলিয়ে অদ্ভুত জাদুর কোন এক নগরি আপনাকে বিমোহিত করে রাখবে ঘুরে বেড়ানোর সময়টুকু। এছাড়া লাউয়াছড়া উদ্যানের ভিতরেই রয়েছে ঝিরি, খাসিয়াপুঞ্জি, চা-বাগান ও পানের বরজ।

কিভাবে যাবেন

শ্রীমঙ্গল হয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে সিলেটের পথে হানিফ পরিবহন, টি আর ট্র্যাভেলস,সোহাগ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবহনের বাস চলাচল করে। এসি/নন-এসি বাসের ভাড়া লাগবে ৫৭০-১২০০ আর ঢাকা থেকে সিলেট যেতে চাইলে রেলপথে রয়েছে পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালিনী এক্সপ্রেস কিংবা উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্রীমঙ্গল আসতে পারবেন। ট্রেনের টিকিটের মূল্য পরবে আসনভেদে ২৭৫-৬২৭ টাকা। এছাড়া আকাশপথে ভ্রমণ করতে চাইলে ঢাকা থেকে সিলেটে এসে তারপর সড়ক পথে শ্রীমঙ্গলে যেতে পারবেন।

শ্রীমঙ্গল পৌঁছে সেখান থেকে লাউয়াছড়া উদ্যানে যেতে আপনার চাহিদা অনুযায়ী কোন গাড়ি নিয়ে নিতে পারবেন। ইজিবাইক, সিএনজি, জীপ, মাইক্রোবাস যে কোন মাধ্যমেই যাওয়া যায়। তবে যাওয়া আসা ও ঘুরে বেড়ানোর সময়সহ রিজার্ভ নিলে ৪০০-৫০০ টাকায় সিএনজি পেয়ে যাবেন।

টিকেট

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা (জনপ্রতি) ছাত্র ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য, ৫০ টাকা প্রবেশ মূল্যে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যটক (দেশী) প্রবেশ করতে পারবে। আর ৫০০ টাকা প্রবেশ মূল্য বিদেশী পর্যটকদের ক্ষেত্রে। ২৫ টাকা গুনতে হবে গাড়ি, জীপ ও মাইক্রোবাস পার্কিং এর জন্য। আর যদি গাইড নিতে চান তবে ২০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে এখানে তিন ক্যাটাগরির গাইড পেয়ে যাবেন।

কোথায় থাকবেন

শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য ভাল মানের হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে রয়েছে

১. গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ (পাঁচ তারকা),

২. রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট, টি টাউন রেস্ট হাউজ, টি রিসোর্ট (01749-014306)

৩. নিসর্গ ইকো রিসোর্ট, হোটেল প্লাজা ( 01766557780 )।

এই সকল হোটেল এবং রিসোর্টে বিভিন্ন সময় অনেক ডিসকাউন্ট থাকে। তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কথা বলে প্রয়োজনে ভাড়ার ক্ষেত্রে একটু দরদাম করে নিন। এছাড়া আপনি আরও কম খরচে শ্রীমঙ্গল থাকতে চাইলে একটু খুঁজে দেখলেই আপনার মন মত বিভিন্ন মানের হোটেল পেয়ে যাবেন শহরে।

কোথায় খাবেন

কিছু হালকা খাবার সাথে নিতে পারেন কারন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আশে পাশে খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা বা হোটেল নেই। এছাড়া শ্রীমঙ্গল শহরেই ফিরে খেতে পারেন। শ্রীমঙ্গলে নানান ধরণের রেস্তোরা আছে। যে হোটেলগুলোর মধ্যে পানশী ও পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ১৩০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় ভর্তা ভাজিসহ নানা পদের খাবার খেতে পারবেন।

মৌলভীবাজার জেলার আরও কিছু দর্শনীয় স্থান

১. মাধবপুর লেক
২. হামহাম জল্প্রপাত
৩. চা বাগান
৪. মাধুবকুন্ড ঝর্ণা
৫. সাত রঙের চা – নীলকন্ঠ কেবিন
৬. বাংলাদেশ চা গবেষনা ইন্সটিটিউট

 ভ্রমণের সময় যে বিষয়ে সতর্ক থাকবেন

১. জীব বৈচিত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।
২. ভ্রমণের ক্ষেত্রে জোঁক ও সাপের থেকে সতর্ক থাকুন, শীতকালে এই সমস্যা কম থাকে।
৩. স্থানীয় লোকজনের সাথে বাজে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

Share this post